সিনেমা রিভিউঃ যাও পাখি বলো তারে

"গল্পটা শুধু প্রেম কিংবা বিচ্ছেদের নয়, বন্ধুত্বেরও" "একেবারে গ্রাম্য পটভূমির গল্প নিয়ে এটি। প্রেম, বিরহ ও বিচ্ছেদ থাকছে মূল বিষয়।"

সিনেমা রিভিউঃ যাও পাখি বলো তারে

"গল্পটা শুধু প্রেম কিংবা বিচ্ছেদের নয়, বন্ধুত্বেরও"

"একেবারে গ্রাম্য পটভূমির গল্প নিয়ে এটি। প্রেম, বিরহ ও বিচ্ছেদ থাকছে মূল বিষয়।" পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের মুখে এমন কথা শুনে সত্যি বলতে আমার এই ছবিটি একই সাথে দেখার ইচ্ছে হয়েছিল, আবার অনিচ্ছাও হয়েছিল। ইচ্ছে হয়েছিল কারণ চারদিকে যখন অ্যাকশন ও থ্রিলার মুভির গল্প, সেখানে গ্রাম্য পটভূমির প্রেম ও বিরোহের গল্প অর্থাৎ গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসাতে চান নি পরিচালক, অপরদিকে অনিচ্ছা হয়েছিল ট্রেলার আমায় খুব বেশি আকৃষ্ট করতে পারে নি। যাই হোক, সিনেমাপ্রেমী হিসেবে যেহেতু অধিকাংশ সিনেমাই দেখার চেষ্টা করি, আর দিনটি ছিল বন্ধের দিন, সুতরাং সব রকম দ্বিধা ও অনিচ্ছা নিয়েই শেষ পর্যন্ত সকাল ১১ঃ১৫ শো'তেই টিকেট কেটে ফেললাম বসুন্ধরার স্টার সিনেপ্লেক্সে। 

গল্পের শুরুটা হয় একদম সাদামাটা ভাবেই। নায়ক মজনু দর্জির কাজ করলেও কাজের প্রতি তার যেমন ভালোবাসা আছে, রয়েছে তরুণ বয়সের উচ্ছ্বসিত আহ্লাদও। তাই বড় লোকের বেটি লাভলীকে দেখে তার মনেও সেই উত্থাল পাথাল ঢেউ শুরু হয়৷ যদিও নিজের অবস্থান সম্পর্কে পুরোপুরিই  জ্ঞাত মজনু। তাই লাভলীকে বিয়ের স্বপ্ন নয়, বরং নিজের জীবনের 'ভালোবাসার তাজ'র জায়গায় স্থান দেয় মজনু। 

এদিকে লাভলীকে নিয়ে ভাবনা ছাড়াও সিনেমায় আরেকটি গল্পও রয়েছে মজনুর। যেই গল্প শুধুই বন্ধুত্বের, যেখানে নেই কোন স্বার্থ, বরং রয়েছে আবেগ মাখানো শৈশব, রয়েছে ভাইয়ের মতোই একে অপরের প্রতি টান, কিন্তু এই বন্ধুত্ব ও মজনুর প্রেম যে কখন গিয়ে মজনুর জীবনকে ক্ষতবিক্ষত করে, আবার একই সাথে বলতে হবে মজনু চরিত্রের পূর্ণতাও দান করে তা হয়তো সজ্ঞানে মজনু নিজেও বুঝতে পারে না। 

সিনেমার প্রথমার্ধে আমার মজনু চরিত্রে আদর আজাদকে কিছুটা অপরিপক্কই লেগেছে৷ এর পিছনে হয়তো কিছুটা গল্পও দায়ী৷ তবে সিনেমার শেষার্ধে আদর আজাদের অভিনয় মুগ্ধ হওয়ার মতোই। মজনু চরিত্রের প্রতি সুবিচারই করেছে সে। মজনুর বন্ধু শামসুল চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাশেদ মামুন অপু। এই লোকটি যতটা সময় পর্দায় ছিলেন, মাতিয়েই রেখেছেন। পুরো সিনেমায় 'শৈশবকাল থেকে দুই বব্ধু এক প্যান্ট পড়েছি" এমন হাস্যরসাত্মক অনেক সংলাপ যেমন ছিল, তেমনি শামসুলের প্রতিবাদী চরিত্রটাও ছিল দারুণ কিছু। 'পরাণ' চলচ্চিত্রে ভিলেনী ভূমিকার বাইরে গিয়ে এই সিনেমায় অপুর শামসুল হয়ে ওঠাটা এবং বন্ধুত্বের জন্য তার সব আত্মত্যাগ ছিল ছিল নান্দনিক। দুই বন্ধুর প্রতিটি দৃশ্যই ছিল রোমাঞ্চিত ও উপভোগ্য। 

সিনেমায় টাইটেল গান "যাও পাখি বলো তারে" বড় পর্দায় দারুণ উপভোগ্য ছিল। গানগুলোর দৃশ্যে এবং শেষের কিছু দৃশ্য ছাড়া মাহিয়া মাহিকে আমার গতানুগতিকই লেগেছে। ক্লিওপেট্রা ফিল্মসের ব্যানারে নির্মিত ‘যাও পাখি বলো তারে’র কাহিনী ও সংলাপ লিখেছেন আসাদ জামান।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow