সিংহ কেন জঙ্গলের রাজা

সিংহই কেন বনের রাজা এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি নিয়ে কিছু বলা উচিত। শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠিতে অনেকে এগিয়ে রাখবেন বুদ্ধিমত্তাকে। উন্নত বুদ্ধিমত্তা নিঃসন্দেহে যেকোনো প্রাণীকে শ্রেষ্ঠত্বের দৌড়ে এগিয়ে রাখবে। কিন্তু সিংহ বনের সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী নয়।

সিংহ কেন জঙ্গলের রাজা

সিংহ কেন জঙ্গলের রাজা

সিংহই কেন বনের রাজা এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি নিয়ে কিছু বলা উচিত। শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠিতে অনেকে এগিয়ে রাখবেন বুদ্ধিমত্তাকে। উন্নত বুদ্ধিমত্তা নিঃসন্দেহে যেকোনো প্রাণীকে শ্রেষ্ঠত্বের দৌড়ে এগিয়ে রাখবে। কিন্তু সিংহ বনের সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী নয়। শিম্পাঞ্জি, বানর, টিয়া, শেয়ালসহ জঙ্গলের অনেক প্রাণীই সিংহের চেয়ে বুদ্ধিমান। তাই বুদ্ধিমত্তাই যদি শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি হতো তাহলে নিশ্চিতভাবেই সিংহ রাজা হবার দৌড়ে পিছিয়ে পড়ত। মস্তিষ্কের আকার বিবেচনা করলে জঙ্গলের প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় মস্তিষ্ক হাতির, সিংহের নয়। দৈহিক আকার অবশ্যই জঙ্গলের প্রাণীদের প্রভাব বিস্তারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু জঙ্গলে তো সিংহের চেয়েও বিশালাকার প্রাণীর বাস রয়েছে। বিশালাকারের হাতিকে ছাড়িয়ে জঙ্গলের রাজা হওয়ার জন্য সিংহের দৈহিক আকারের বিশেষ কোনো অবদান নেই। তাছাড়া পুরুষ সিংহের ওজন যেখানে গড়ে ১৯০ কেজি, সেখানে একটি এশিয়ান হাতির ওজন গড়ে ৪,০০০ কেজি। আফ্রিকান হাতির গড় ওজন আরো বেশি। প্রায় ৬,০০০ কেজি। তাই দৈহিক আকার কিংবা ওজন কোনোটাই সিংহের শ্রেষ্ঠত্বের পক্ষে যুক্তি দিতে ব্যর্থ। এবার আসা যাক শক্তিমত্তায়। সিংহ কি বনের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রাণী? গণ্ডার, হাতি, গরিলা কিংবা বাঘ- এসব প্রাণী অবশ্যই সিংহের চেয়ে শক্তিশালী। একটি সিংহ যেখানে প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে ৬৫০ পাউন্ডের কামড় বসাতে পারে, সেখানে একটি বাঘ বসাতে পারে প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে ১,০৫০ পাউন্ড। বাঘ তার নিজের চেয়ে প্রায় ৫ গুণ বেশি ওজনের শিকার ধরতে পারে। অন্যদিকে সিংহ নিজের দৈহিক ওজনের দ্বিগুণ পরিমাণ পর্যন্ত শিকার ধরতে পারে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মহিষের প্রজাতি হলো গোর, যেটা ভারতীয় উপমহাদেশে পাওয়া যায়। একেকটি গোরের ওজন প্রায় এক হাজার কেজির কাছাকাছি হয়ে থাকে। এসব মহিষ রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বেশ পছন্দের শিকার। তাই শক্তিমত্তা বিবেচনায় সিংহের চেয়ে বাঘ বেশি শক্তিশালী। তাই বাঘ কিছুটা এগিয়েই থাকবে। বাঘ আর সিংহের মধ্যে লড়াইয়ের আয়োজনও করা হয়েছিল। উনিশ শতকের শুরুর দিকে ভারতের বারোদার রাজা বাঘ আর সিংহের ভেতর যুদ্ধ বাধিয়েছিলেন। এমনকি এই যুদ্ধে বাজিও ধরেছিলেন সিংহের পক্ষে ৩৭ হাজার রূপি। কিন্তু যুদ্ধে সিংহ হেরে যায়। ফলে বিশাল অংকের টাকা গচ্চা যায় রাজার। বাঘ আর সিংহের কিছু তুলনামূলক তথ্য দেওয়া যাক। বাঘের পা সিংহ থেকে ছোট, তাই কম সেন্টার অফ গ্র্যাভিটির কারণে বাঘ নিচু হয়ে আক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে এবং ভারসাম্য ভালোভাবে বজায় রাখতে পারে। এছাড়াও লাফিয়ে বাঘ অনেক উঁচুতে আক্রমণ করতে পারে। কিন্তু সিংহ বাঘের মতো দুই পায়ে দাঁড়িয়ে আক্রমণে ততটা সক্ষম নয়। বাঘের মস্তিষ্কের আকারও সিংহের চেয়ে বড়। সিংহ থেকে প্রায় ১৬ শতাংশ বড়। এবার মজার একটি তথ্য দিয়ে রাখি। সিংহকে বনের রাজা বলা হলেও সিংহ কিন্তু মোটেই বনে বাস করে না। আফ্রিকার সাহারা মরুভূমির সাভানা অঞ্চলে এদের বসবাস। সিংহ বলতে মূলত আফ্রিকান সিংহকেই বোঝানো হয়। তবে আফ্রিকার বাইরেও কিছু সিংহ দেখা যায়।  রাজা হওয়ার জন্য যে বিষয়টা সিংহকে সবচেয়ে এগিয়ে রেখেছে সেটা হলো তার চেহারা। আগে দর্শনধারী তারপর গুণবিচারী কথাটা এক্ষেত্রে একদম ফলে যায়। সিংহের কোমর পর্যন্ত বিস্তৃত কেশর যেন বারবার তার রাজকীয়তার জানান দেয়। নিঃসন্দেহে কোমর পর্যন্ত বিস্তৃত কেশরের কারণে জঙ্গলের যেকোনো একেকটি সিংহের গর্জন প্রায় ৮ কিলোমিটার দূর থেকেও শোনা যায়। গর্জনের মাধ্যমে সিংহরা অন্যদেরকে নিজেদের সীমানার জানান দিয়ে থাকে। তাই রাজকীয় গর্জন কিংবা হুংকার সিংহের পশুরাজ হওয়ার পেছনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। রাজা বাদশাহদের সাথে ভোগ-বিলাস ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সিংহের প্রাইডেও এই বিষয়টি স্পষ্ট। সাধারণত দলের স্ত্রী সদস্যরাই শিকার ধরার কাজ করে থাকে। তবে শিকার স্ত্রীরা করলেও প্রথম অধিকার প্রাইডের নেতা পুরুষ সিংহের। তাই শিকারের পর প্রথমে পুরুষ সিংহ তার আহার শেষ করে, তারপর বাকি অংশ স্ত্রী সিংহরা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়। আসলে সিংহই জঙ্গলের রাজা। কারণ তার থাকা, খাওয়া, ঘুমানো ও শিকার করা রাজার মত। সিংহের মধ্যে এমন কিছু গুণ রয়েছে যা সিংহকে বনের রাজা করে তোলে। কারণ একটি সিংহ দিনে ২০ ঘন্টা ঘুমায়। ২৪ ঘন্টার মধ্যে শুধুমাত্র একজন রাজাই ২০ ঘণ্টা ঘুমাতে পারে। একইভাবে সিংহের গর্জন অন্যান্য প্রাণীদের চেয়ে দ্রুত। সিংহ গর্জন করলে তার কন্ঠ বহু মাইল পর্যন্ত শোনা যায়। দৈর্ঘ্য ও ক্ষিপ্ততা ও শক্তির দিক থেকে সিংহকে অন্যান্য প্রাণীর সাথে তুলনা করা গেলেও সিংহের মতো নির্ভীকতা কারও নেই। অন্য কোনও প্রাণীকে সে ভয় পায় না। তাই অন্যান্য প্রাণীদের সাথে লড়াই করতেও এতটুকু পিছুপা হয় না। সবচেয়ে বড় কথা হলো সিংহ আইনে দৃঢ় বিশ্বাসী। যদি তার নিয়ম অটল থাকে সিংহ তার ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করে এবং অন্যান্য প্রাণীদের নিয়ম মেনে চলার নিশ্চিত করে। সবচেয়ে বড় কথা সিংহ কখনো বনে থাকে না। সিংহ জঙ্গলের রাজা হলেও সিংহ কেবল ঝোপঝাড়, উচু তৃণভূমিতে বা পাহাড়ের চূড়ায় থাকে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow