গেলো শতাব্দীর ৮০ ও ৯০ এর দশকে কলকাতার বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় দক্ষতার গুনে মাধ্যমে দর্শকদের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছিলেন অকাল প্রয়াত জনপ্রিয় অভিনেতা সৌমিত্র ব্যানার্জী। অনেক ছবিতে তিনি খলনায়ক হিসেবে অভিনয় করেছিলেন। দর্শকদের নজরে তিনি ছিলেন বড়লোক বাবার বিগড়ে যাওয়া ছেলে।
সৌমিত্র ব্যানার্জীর নাম এবং চেহারার কারণে তাকে অনেকেই স্বর্ণযুগের বিখ্যাত অভিনেতা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছেলে নানু ভেবে ভুল
করতেন। আসলে কিন্তু তার সঙ্গে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও সম্পর্ক ছিল না। এদিকে আবার সিনেমাতে তার বড়লোক বাবার ‘বখাটে ছেলে’র অভিনয় দেখলেই দর্শকরা চটে যেতেন।
অত্যন্ত বড় মাপের অভিনেতা ছিলেন সৌমিত্র। রাস্তাঘাটে মেয়েদের দেখলে অশ্লীল মন্তব্য, নায়কদের হাতে বেধড়ক মার খাওয়া, এই সকল চরিত্রেই তাকে বেশি দেখা যেতো। মাত্র ১০ বছর বয়সে ‘সুভা’ ও ‘দেবতার গ্রাস’ ছবিতে শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করে তিনি তার অভিনয় জগতে পা রাখেন।
১৯৮২ সালে মিঠুন ও দেবশ্রী রায়ের সঙ্গে ‘ত্রয়ী’ ছবির মধ্য দিয়ে তিনি আবার নতুন করে নিজের অভিনয় ক্যারিয়ার শুরু করেন। ছবিটি বক্স অফিসেও বিপুল সাফল্য অর্জন করে। এরপর আর তাকে ফিরে তাকাতে হয়নি। গুরুদক্ষিণা থেকে শুরু করে ইন্দ্রজিৎ, অমর সঙ্গী'র, মতো একাধিক সুপারহিট ছবিতে কাজ করেছেন।
নায়কের তুলনায় খলনায়ক হিসেবেই নির্মাতাদের প্রথম পছন্দ ছিলেন তিনি। শুধু যে অভিনয় তা না, গান গাইতেও ভালোবাসতেন সৌমিত্র। তার গলায় কিশোর কুমারের গান শুনে মুগ্ধ হতেন শ্রোতারা। তার বৈবাহিক জীবন খুব একটা সুখের ছিল না। তিনি বিয়ে করেছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের সুপারহিট খলনায়িকা রীতা কয়রালকে।
সৌমিত্রর মদ্যপানের অভ্যাসের ফলে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়। এই অতিরিক্ত মাদকাসক্তি একটু একটু করে তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। শেষ জীবনে কাজের সুযোগ কম থাকায় প্রবল অর্থকষ্টের মধ্যে দিন কাটতো তার। ক্যারিয়ারে প্রায় দেড় শতাধিক ছবিতে কাজ করলেও মনের মতো চরিত্র না পাওয়ায় তার আক্ষেপ ছিল। ২০০০ সালে মাত্র ৪৫ বছর বয়সে তিনি প্রয়াত হন এই অভিনেতা।