এই কাজগুলো ভুলেও করবেন না,ইন্টারনেটে সুরক্ষিত থাকতে চাইলে।

এই কাজগুলো ভুলেও করবেন না,ইন্টারনেটে সুরক্ষিত থাকতে চাইলে।

একথা নিঃসন্দেহে অনস্বীকার্য যে, চলতি সময়ে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের মতো ইন্টারনেট আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এক অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্তর্জালের মায়াজালে আমরা এমনভাবে জড়িয়ে গিয়েছি যে, এখন হাজার চাইলেও এর থেকে বেরিয়ে আসা কার্যত অসম্ভব বললেই চলে। এই অত্যাশ্চর্য জিনিসটি অনেক কঠিন কাজকে সহজ করে দিয়ে মানবজীবনে আমূল পরিবর্তন এনেছে। বর্তমানে বেশিরভাগ পরিষেবাই অনলাইন হয়ে যাওয়ায় ঘরে বসেই সহজে সব কাজ সেরে ফেলার জন্য ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রতি আগ্রহ মানুষের মধ্যে দিন-কে-দিন ব্যাপকভাবে বাড়ছে। আর চলতি সময়ে অত্যন্ত সাশ্রয়ী মূল্যে উপলব্ধ হওয়ায় সকল শ্রেণির মানুষই এখন চুটিয়ে অন্তর্জালের ব্যবহার করে থাকেন।তবে চিন্তার বিষয় হল, এই বিপুল ব্যবহারের ফলে হালফিলে অপরাধের ধরন ক্রমশ বদলাচ্ছে। বর্তমানে হ্যাকারদের বাড়বাড়ন্তের জেরে ইন্টারনেট নির্ভর ই-জীবনযাপনে ক্রমশ জাল বিস্তার করছে নানা ধরনের সাইবার জালিয়াতির (Cyber Fraud) ঘটনা। দুর্বৃত্তদের মস্তিষ্কপ্রসূত সুনিপুণ ফন্দিফিকিরের সৌজন্যে ইউজারদের অজান্তেই হ্যাক হয়ে যাচ্ছে তাদের ডিভাইস, এবং তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে সারা জীবনের কষ্টার্জিত টাকা লোপাট করে নিচ্ছে হ্যাকাররা। তাই স্ক্যামারদের রমরমার এই ডিজিটাল যুগে নিরাপদ এবং সুরক্ষিত থাকতে হলে ইউজারদের সচেতন থাকা একান্ত আবশ্যক। সেক্ষেত্রে বলি, হ্যাকাররা যতই ছলচাতুরি করুক না কেন, একটু চোখকান খোলা রেখে চললেই কিন্তু জালিয়াতদের অতি অনায়াসে পরাস্ত করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে চলতি সময়ে যদি হ্যাকারদের হাত থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে চান, তাহলে নিম্নোক্ত নির্দেশিকাগুলি অবশ্যই মেনে চলুন।

>>হ্যাকারদের খপ্পরে পড়তে না চাইলে এই টিপসগুলি মেনে চলুন
.১. একাধিক অ্যাকাউন্টে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করবেন না
সর্বদা ইউজারদের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের জন্য আলাদা আলাদা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা উচিত। মনে রাখার সুবিধার্থে অনেক সময়ই ব্যবহারকারীরা সমস্ত অ্যাকাউন্টে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেন, যা মোটেই ঠিক কাজ নয়; কারণ এর ফলে অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে কোনোভাবে যদি জালিয়াতরা যে-কোনো একটি অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড জেনে ফেলে, তাহলে সেটিকে কাজে লাগিয়ে সংশ্লিষ্ট ইউজারের সকল অ্যাকাউন্টের অ্যাক্সেস এক নিমেষেই দুর্বৃত্তদের হাতের মুঠোয় চলে যায়। তবে বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে নানারকম পাসওয়ার্ড দেওয়া থাকলে এই ধরনের ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা প্রায় থাকে না বললেই চলে। তাই সবসময় বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের জন্য আলাদা আলাদা এবং বেশ জটিল ও বড়োসড়ো গোছের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা উচিত।

৩. অজানা সোর্স থেকে আসা ইমেইলে থাকা অ্যাটাচমেন্টগুলিকে ভুলেও কখনো ওপেন করবেন না

কোনো অজানা অ্যাকাউন্ট থেকে আসা ইমেইলগুলিকে মোটেই পাত্তা দেবেন না; আর সেগুলির সাথে থাকা অ্যাটাচমেন্টগুলিকে ওপেন করার কথা তো মাথাতেই আনবেন না। কেননা স্ক্যামাররা মূলত ফিশিং অ্যাটাকের জন্য এই জাতীয় ইমেইলগুলির সাহায্য নেয়। ব্যবহারকারীরা ভুলবশত এগুলিকে ওপেন করে ফেললেই ইউজারদের ডিভাইসের অ্যাক্সেস চলে যায় হ্যাকারদের হাতে; আর তার ফলটা যে কী হয়, সেটা নিশ্চয়ই আর নতুন করে বলে দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তাই এরকম কাজ ভুলেও কখনো করবেন না।

২. থার্ড-পার্টি সোর্স থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করবেন না

কোনো অ্যাপ ডাউনলোড করতে চাইলে সবসময় তা কোনো অফিশিয়াল এবং অথোরাইজড অ্যাপ স্টোর থেকে করুন। যেমন – অ্যাপ ডাউনলোডের ক্ষেত্রে সর্বদা অ্যান্ড্রয়েড (Android) ব্যবহারকারীদের গুগল প্লে স্টোর (Google Play Store)-এর দ্বারস্থ হওয়া উচিত। কারণ গুগল প্লে স্টোরে কোনো অ্যাপকে তালিকাভুক্ত করার আগে সেটির সিকিউরিটি চেক করা হয়, যার ফলে অ্যাপ্লিকেশনটিতে ক্ষতিকারক ম্যালওয়্যার কিংবা বাগ থাকার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। আর এর সুবাদে হ্যাকিংয়ের হাত থেকেও রেহাই পেতে সক্ষম হন ইউজাররা। অন্যদিকে, থার্ড-পার্টি সোর্স থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করলে কিন্তু অ্যাপটির সম্পর্কে কোনো নিশ্চয়তা পাওয়া যায় না। সোজা ভাষায় বললে, এক্ষেত্রে ব্যবহারকারীদের ডিভাইস হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা বেশ প্রবল হয়ে দাঁড়ায়। তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, সর্বদা অথোরাইজড অ্যাপ স্টোর থেকে যে-কোনো অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করা উচিত।

৪. পাবলিক ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করবেন না

অনলাইনে সুরক্ষিত থাকতে হলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস হল নিরাপদ ইন্টারনেট সংযোগ। কিন্তু এই বিষয়টির সম্পর্কে অনেকেই সচেতন নন। তাই বেশিরভাগ মানুষই সাইবার ক্যাফে, রেস্তোঁরা, বিমানবন্দর বা রেলস্টেশনে থাকা পাবলিক ওয়াই-ফাই কানেকশন ব্যবহার করেন। আর বিনামূল্যে নেট পাওয়া যাচ্ছে বলে অনেকেই এই জিনিসটিকে ব্যবহার করার আগে দুবার চিন্তাভাবনা করেন না। কিন্তু আপনাদেরকে জানিয়ে রাখি, পাবলিক ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা তেমন শক্তিশালী থাকে না। ফলে এই ধরনের ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কের সাহায্যে ইউজারদের ডিভাইসে ম্যালিশিয়াস কোড ইনজেক্ট করে হ্যাকাররা, যার সুবাদে ব্যবহারকারীর ইমেইল বা সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের আইডি এবং পাসওয়ার্ড, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ডিটেইলস সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত তথ্য চুরি যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই বিনামূল্যে পাওয়া গেলেও কখনো পাবলিক ওয়াই-ফাই কানেকশন ব্যবহার করবেন না।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow