কিভাবে কম্পিউটার ক্রাশ হয় ও এর প্রতিকার কি?
কীভাবে কম্পিউটার ক্রাশ হয়
বেশ কয়েক মাস আগেও পিসির আকৃতি এবং ডিজাইন কিভাবে ছোট করা যায় আর সেটা যেন পুরো বিশ্বের সবাই ক্রয় করতে পারে সেই লক্ষ্যেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হত। তারা যখন হার্ডওয়্যার তৈরি করত তখন তারা তাদের স্টোরে পড়ে থাকা সবচেয়ে কম দামের পার্টসগুলো ব্যবহার করত এবং সফটওয়্যার লেখার সময় বিপদজনক শর্টকার্ট ব্যবহার করত। তাছাড়া স্লো স্পিড-বিশিষ্ট পিসিতে ভালো পারফরমেন্স পাবার আশায় তারা তাদের নির্দিষ্ট অপারেটিং সিস্টেম,তাদের সকল এপ্লিকেশন প্রোগ্রাম এবং ডিভাইস ড্রাইভার রান করানোর জন্য তারা মূলত মেইন মেমোরি যেটা আছে সেটির একটি নির্দিষ্ট স্পেস ব্যবহার করত।আর এসবের কোন একটির মধ্যে যদি কোনো ক্ষতিকর বাগ বা সমস্যা থাকতো তাহলে তারা গোটা সিস্টেমটিকে ডিসেবল করে দিতো। তারা অনেক সময় সব সফটওয়্যার নির্দিষ্ট ও ডিফেন্সলেস স্পেস বা অনিরাপদ স্পেস ইউজ করতো ।যার ফলে সেখানকার যেকোনো সফটওয়্যারে একটি সমস্যা দেখা দিতে শুরু করলে সেটি বাকি সফটওয়্যারে আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এটার এতটাই মারাত্নক যে, অনেক এই সমস্যাটি গোটা সিস্টেমকে ক্রাশ করিয়ে দিতে সক্ষম। যার ফলে আমরা আমাদের অতি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হারাতে পারি বা হারিয়েছি।কিন্তু আগেরদিনের পিসিগুলো যথেষ্ট বিখ্যাত এবং বহুল প্রচলিত ছিল শুধুমাত্র তাদের সহজ ও সরলতম আর্কিটেকচারের জন্য। আর এখনকার যেই পিসি গুলো সেগুলো আগের কালের পিসি গুলোর চাইরে তুলনামূলক বেশি ক্রাশ বা বিনাসের শিকার হয়। কারণ বর্তমানে পিসি গুলোর জটিল আকার ধারন করা।এছাড়া বেশ কিছু হাতেগনা কারণও আছে সিস্টেম ক্রাশের সম্মুখীন হবার । পিসি গুলোর বর্তমান অপারেটিং সিস্টেম এর যেই কোড আছে সেগুলোর সাইজের অস্বাভাবিক বাড়ার কথাই আপনি ধরুন।সর্বপ্রথম যখন ১৯৯২ সালের উইন্ডোজ বের হলো যার নাম ছিল এনটি সেটার, সেটির অরিজিনাল ভার্সনে সোর্স কোডের সংখ্যা ছিল প্রায় ৪ মিলিয়ন লাইন। আর ১৯৯৬ সালের রিলিজ হওয়া সেই কোডটির এনটি ৪.০ ভার্সনে সোর্স কোডের পরিমাণ এসে দাঁড়িয়েছে ১৬.৫ মিলিয়ন। এর পরে যে উইন্ডোজ এনটি’র ৫.০ ভার্সন বের করা হলো সেখানে সোর্স কোডের পরিমাণ হয়ে গেল প্রায় দিগুন পরিমাণ। যা ৩০ মিলিয়ন লাইন । এবার বুঝেছেন গনিতটা।শতকরা বাড়ার হার সেখানে ৬ বছরে ৭০০%। যদি সেখানে কোন রকম ক্ষতিকর বাগ থাকে তাহলে পুরো সিস্টেম ক্রাশ হতে কতক্ষণ সময় লাগতে পারে সেটা নিজ দায়িত্বে একবার আপনারাই বের করেন? অনেক সময় সফটওয়্যার প্রবলেম হওয়ার কারণেও এমনটি হতে পারে । যখন কোন সিস্টেম ক্রাশ হয় বা দেখায় তখন সফটওয়্যার গুলো ফেইল করে। যদি এটি কোন এপ্লিকেশন হয় তাহলে আপনাকে আপনার যেই আনসেভড কাজগুলো পিসিতে ছিল সেগুলো আপনাকে দূর্ভাগ্যবশত হারাতে হবে। তবে উন্নত মানের যেই অপারেটিং সিস্টেম আছে তা অবশ্যই অন্যান্য প্রোগ্রামের মেমোরি পার্টিশন সেফ করে রাখবে। অনেক সময় লক্ষ্য করা হয় যে ক্রাশ হওয়া প্রোগ্রামটি আরো অনেক প্রোগ্রামে সমস্যা সৃষ্টি করে ফেলে যেটার প্রভাবে গোটা সিস্টেম এ গিয়ে পড়ে অবং সেটি অচল হয়ে যায়। তখন পিসি রিবুট করা ছাড়া বিকল্প উপায় আর হাতে থাকে না। আবার আনএক্সপেক্টেড রিবুটও আপনার হার্ডডিস্ক এ নানান বাধাবিপত্তি সৃষ্টি করতে পারে। যার ফলে আপনার হার্ডডিস্ক বেশীরভাগ সময় ক্রাশের সম্মুখীন হতে পারে। তারপর আপনাকে অনেক সময় প্রচুর অর্থ ব্যয় করে আবার নতুন হার্ডডিস্ক লাগাতে বাধ্য হতে হয়।
আবার ভাইরাস এর কারনেও অনেক সময় সিস্টেম ক্রাশ বা সিস্টেম নষ্ট হতে পারে। আবার নতুন এক ঝামেলার কথা তো শুনাই হলো না। সেটা হচ্ছে কম্পিউটার এর হার্ডওয়্যার চুরি হওয়া । বিশেষ করে যেটা সবচাইতে অধিক হয় সেটি হচ্ছে র্যাম চুরি । র্যাম চুরির কারণে আপনার সিস্টেম অন হওয়ার সময় প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার এর অভাবে আপনার সিস্টেম ক্রাশ করবে আবারো।
ক্রাশ প্রতিরোধ এর কিছু উপায় জেনে নিন এক নজরে…….. ১) এখন কিভাবে এই বহুল সৃষ্টিত ক্রাশ প্রতিরোধ করা যায়।তো সেজন্য রয়েছে ভালো মানের এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার,যেগুলো অনেকেই ব্যবহার করে থাকেন।এই ধরেন যেমনঃ নরটন এন্টিভাইরাস। এন্টিভাইরাসের কাজ আসলে কি সেটা আগে জানতে হবে।যেই সফটওয়্যার ভাইরাসকে দমন করতে সক্ষম বা দমন করার জন্য তৈরী তাদের কে বলা হয় মূলত এন্টিভাইরাস। এন্টিভাইরাস আপনার পিসির মেমোরির কিছু অংশ হয়তো সে নিজে দখলে রাখবে। কিন্তু সে আপনার কম্পিউটারকে ভাইরাসের হাত থেকে ফুল প্রোটেকশন দিবে। আর প্রতি ৩ মাস অন্তর অন্তর আপনার এন্টিভাইরাসটি আপডেট দেয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন । আর মাসে অন্ত্যত একবার হলেও আপনার এন্টিভাইরাসটি দিয়ে সম্পূর্ণ পিসিটি স্ক্যান করুন। যদি আপনি ইন্টারনেট থেকে কোন কিছু ডাউনলোড করেন তবে সেটি ডাউনলোড করার পর স্ক্যান করে নিন।অনেক সময় নামানোর পর অটো স্ক্যান হয়ে যেতে পারে সেক্ষেত্রে সিটিংস থেকে অটো স্ক্যান অপশন যদি থাকে তাহলে অন করে নিতে পারেন।অনেক সফটওয়্যার এ অপশন নাও থাকতে পারে। ২) আপনার কোনো গুরুত্বপূর্ণ ফাইল এর ব্যাকঅাপ সেট করে নিন। যদিও এটি খুবই বিরক্তিকর জিনিস সবার কাছে। কিন্তু সিস্টেম ক্রাশ হলে যদি আপনার সেই গুরুত্বপূর্ণ ফাইলগুলো আর খুঁজেই না পাওয়া যায় তার চেয়ে বেটার ব্যাকঅাপ রাখা। ৩) প্রতি সপ্তাহে অন্ত্যত এক-দুইবার আপনার ড্রাইভ গুলো স্ক্যান ডিস্ক দিয়ে স্ক্যান করিয়ে নিন। এটি করার জন্য আপনার ড্রাইভ এর টপ সাইডে রাইট আইকন ক্লিক করে প্রপারটিজে অপশনটিতে ক্লিক করুন। তার পর ট্যুলস ট্যাব এ এন্টার করে স্ক্যান ডিস্কে গিয়ে আপনার ড্রাইভ টি সম্পূর্ণ স্ক্যান করুন। এটি আপনার হার্ডডিস্ক কে চেক করিয়ে তারপর সমস্যা থাকলে সেগুলো রিপেয়ার করে ঠিক করে দিবে। ৪) প্রতি মাসে অন্ত্যত একবার বা দুইবার আপনার ড্রাইভ গুলো ডি-ফ্রাগমেন্ট করে নিতে পারেন। এতে আপনার পিসির পারফরমেন্স ইনক্রিজ হবে এন্ড ইউ নো পারফরম্যান্স ইজ বেটার দ্যান পাস্ট পারফরম্যান্স। ৫)পিসির স্টার্ট আপ থেকে আপনি আপনার অপ্রয়োজনীয় ফাইলগুলো রিমুভ করে ফেলুন। ৬) অযথা অপ্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ইন্সটল করে বসে থাকবেন না।বর্তমানে যদি করা থাকে তবে এক্ষুনি আনইন্সটল করে ফেলুন। ৭) নিজের প্রয়োজন ছাড়া বেশি প্রোগ্রাম একসাথে কখনো রান করাতে যাবেন না। যার ফলে দেখা যায়, অনেক সময় আপনি মাল্টিটাস্কিং ফিল নিতে গিয়ে সিস্টেম রিসোর্চের ঘাটতি খেয়ে আপনার সব কিছু ক্রাশ হয়ে হারিয়ে যেতে পারে। ৮) সর্বশেষে এসব ক্রাশ থেকে পিসিকে বাচাঁতে আপনি ইচ্ছা করলে ক্রাশ প্রটেক্টর সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারেন।পিসি ব্যবহার যখন করবেনই,একটু নিরাপদ রেখে ব্যবহার করলে অসুবিধে কোথায় বলেন?
অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ সবাইকে।আজকে এই পর্যন্তই।
What's Your Reaction?