- 'ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শো' দেখার একটা বাতিক আমার ভিতর সব সময়ই কাজ করে। দুর্ভাগ্যবশত 'হাওয়া'র ক্ষেত্রে সেটা বজায় না থাকলেও 'অপারেশন সুন্দরবন'র জন্য আগে-ভাগেই টিকিট কেটে রেখেছিলাম।
'অপারেশন সুন্দরবন'- চলচ্চিত্রের নামটিই বলে দেয় এটা একটি অ্যাকশন ঘরানার ফিল্ম। অপরদিকে সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে র্যাব ওয়েলফেয়ার কোওপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড-এর অর্থায়নে। সুতরাং সিনেমাটিতে র্যাবের কাজের একটা ধারণা পাব এটা সহজেই অনুমান করেছিলাম। একই সাথে ছিল ডকুমেন্টারি হয়ে যাওয়ার ভয়। কিন্তু সুন্দরবনের প্রেক্ষাপটে এমন জীবনের গল্প সত্যিই প্রত্যাশা করি নি।
না মাস্টারপিস এই সিনেমা নয়! অল্প-বিস্তর ভুল এই সিনেমাতেও রয়েছে। তবে সিনেমা শেষে আমি তৃপ্ত। বিশেষ করে 'অপারেশন সুন্দরবন'র সিনেমাটোগ্রাফি আমায় আকৃষ্ট করেছে। সিনেমার একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই চলচ্চিত্রের দৃশ্যায়নে ছড়িয়েছে মুগ্ধতা। রাতের অন্ধকারের পানির কয়েকটি দৃশ্যায়ন আমাকে সত্যিই 'হাওয়া' চলচ্চিত্রের সিনেমাটোগ্রাফির ফিল দিয়েছে৷
অপারেশন সুন্দরবন গল্পের কথা বললে চিত্রনাট্য আমার প্রথম দিকে একটু স্লো লেগেছে, আবার একইভাবে শেষাংশ ভয়ংকর ফার্স্ট লেগেছে৷ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের ঠিকভাবে প্রষ্ফুটন আমার মনে হয় নি। তবে পজিটিভ হচ্ছে শেষের কয়েকটি টুইস্ট আপনাকে রোমাঞ্চিত ও উৎকন্ঠিত করবে। এছাড়া জলদস্যুদের জীবনের সাথে জড়িয়ে রয়েছে সুন্দরবনের জেলেদের জীবন। রাতভর মাছ ধরে জলদস্যুদের সিন্ডিকেটে কিভাবে জেলে পরিবার সর্বস্বান্ত হয় এবং জেলে থেকে একজন জলদস্যু হয়ে ওঠে সেই গল্প ফুটে উঠেছে 'অপারেশন সুন্দরবন' গল্পে।
সিনেমাটিতে ছিল জনপ্রিয় ও স্টার অভিনয় শিল্পীদের ছড়াছড়ি। সুতরাং নিজের চরিত্রটির প্রতি দর্শকের দৃষ্টি রাখার একটা চ্যালেঞ্জ প্রত্যেকের ছিল। রিয়াজের অভিনয় আমার অ্যাভারেজ লেগেছে। মেজর চরিত্রে ছিলেন সিয়াম আহমেদ। ছবিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই চরিত্রে সিয়াম বেশ ভালোই করেছেন৷ বিশেষ করে অপারেশনের খাতিরে তার নেয়া রিস্কগুলো চরিত্রটিতে আলাদা মাত্রা দিয়েছে। তাসকিন আহমেদকে আমরা ইতোমধ্যে একজন ভিলেন চরিত্র হিসেবে মাথায় সেট করে নিয়েছি তবে পুরো মুভিতে এই চরিত্রের রহস্য আমার বেশ ভালো লেগেছে। অভিনয়ে আমার মনে হয় সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে মনোজ কুমার, রওনক হাসান ও তুয়া চক্রবর্তী। পাপড়ি চরিত্রে এতো সুন্দরভাবে তুয়া নিজেকে মানিয়েছেন যার কথা আলাদা করে না বললেই নয়।
ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক আমার যথেষ্ট রিলেটেড মনে হয়েছে। সবশেষে, নির্মাতা দীপঙ্কর দীপন 'অপারেশন সুন্দরবন' যেখানে শেষ করেছেন, আমার মনে হয় এই ছবিটির চাইলেই সিক্যুয়েল করা সম্ভব এবং এমনটা হলে হয়তো গল্প ও চরিত্রগুলোর বর্ণনসহ এই পার্টে না হওয়া অনেক কিছুই আরও বেশি উপভোগ্য ও রোমাঞ্চকর হবে দ্বিতীয় পর্বে।