উরুঙ্গি কথা ও উরুঙ্গি কাহিনি
উরুঙ্গি কথা
(Bangladesh on Record)‘জিবরাইলের ডানা’র গল্পকার শাহেদ আলীর (১৯২৫-২০০১) আত্মজীবনী ‘ জীবন কথা’য় একটি বিশেষ যাযাবর গোষ্ঠীর কথা জানা যারা সিলেট অঞ্চলে উরুঙ্গি নামে পরিচিত ছিল। শাহেদ আলী যখন স্কুল ছাত্র অর্থাৎ ত্রিশের দশকের তাদের স্কুল মাঠে উড়ুঙ্গিরা প্রায়ই আসত এবং সেই মাঠেই তাঁবু ফেলত। তারা বাড়ি বাড়ি ঘুরে জাদু দেখাত। শাহেদ আলী তাঁর অভিজ্ঞতায় বলেন: একদিন কেউ হয়তো দাড়িয়ে তামাশা দেখছে আর অমনি তার লুঙ্গির নিচ থেকে বেরিয়ে এলো একটা আস্ত ডিম। কি লজ্জাই না লাগত আমাদের! এই জাদু দেখার চাল-ডাল আর পয়সাকড়ি দিতে হতো। তাদের ভাষা বুঝতাম না। তাদের চুল ছিল পিঙ্গল আর চোখদুটি ছিল লাল কোরলের মতো। এই চোখ নাকি আধ্যাত্মিক চোখ। আমাদের এই এলাকায় বলত বুরুঙ্গিয়া চোখ। ওরা দৌড়ের ঘোড়া বিক্রি করত। ঘোড়ার পশম দিয়ে তৈরি করত পাখি ধরার ফাঁদ। আমরা এই ফাঁদকে বলতাম জাঙ্গি। জাঙ্গি পেতে আমরা ঘুঘু ধরতাম,জালালি কবুতর ধরতাম। কোড়া শিকার করতাম। উরুঙ্গিরা জাদুটোনা করত। তারা ইরান দেশ থেকে আসত। সঙ্গে নিয়ে আসত বিচিত্র সব অভিনব পসরা। ওরা দু-তিন মাস থেকে আবার অন্য জায়গায় চলে যেত। ঘোড়ার খাবার সংগ্রহ করা তাদের জন্য একটি সমস্যা হয়ে দাড়ায়। ঘাস ফুরিয়ে গেলে নতুন ঘাস সহজে পাওয়া যেতনা। একবার তাদের একটি ঘোড়া এক ব্যক্তি কিনেছিল। সেই ঘোড়া দৌড়াতে গিয়ে দুগনুই গ্রামের এক ছেলে ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে গিয়েছিল। এতে তার একটি পা ভেঙ্গে যায়। তা নিয়ে মানুষের অনেক আফসোস। তারা এই ভাঙ্গা পা ভালো হতে বহুদিন লেগেছিল। তথ্য সুত্র: শাহেদ আলী, জীবন কথা , বাতিঘর, ২০১৯। ছবি: ছবিটি ১৮৮০ এর দশকে তোলা। ঢাকায় চিতাবাঘের খেলা প্রদর্শনকারি একটি দল । ছবির সুত্র: ইফতিখার-উল-আউয়াল সম্পাদিত ”আলোকচিত্রে সেকালের ঢাকা”
What's Your Reaction?