ঘরে বসেই বিদেশে পেমেন্ট এবং US বিজনেস সেটাপ, পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন

পেপাল পেমেন্ট, ইউএস বিজনেস, অনলাইনে ডলার পেমেন্ট,

ঘরে বসেই বিদেশে পেমেন্ট এবং US বিজনেস সেটাপ, পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন

অনলাইনে ঘরে বসেই পেপাল বা স্ট্রাইপ বা শপিফাই পেমেন্টস লিগ্যালি, কোন ধরণ এর ঝামেলা ছাড়াই ইউজ করে USA তে বিজনেস এন্টিটি প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন এবং ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস করতে চাইলে কি কি করতে হবে সেটি ও  একটা স্টেপ বাই স্টেপ LLC Business Entity তৈরির সহজ গাইডলাইন শেয়ার করবো আজকের আর্টিকেলে। 

আজকের পর থেকে আশা করা যায়, যেকেউ এখন অনলাইনে প্রায় সকল ধরণ এর সার্ভিস পেমেন্ট নেওয়া, যেকোন ধরণ এর প্রোডাক্ট ইন্টারন্যাশনালি বিক্রি করা, পেপাল এবং স্ট্রাইপ এর মতো জনপ্রিয় যে কোন পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করতে না পারার মতো বহুদিন এর সব সমস্যার সমাধান করতে পারবে। আপনার অনলাইনে চলার পথের সব বাধা সরিয়ে, সুদূর আমেরিকাতে বাংলাদেশে বসেই একটা কোম্পানি স্থাপন করতে পারবেন নিশ্চিন্তে। আর ফোকাসড থেকে সামনে এগিয়ে যেতে পারবেন। 

চলুন শুরু করা যাক - 

✅ স্টেপ ১ঃ  বাংলাদেশের আমরা যেকোনো name এ ব্যবসা শুরু করতে পারি। ট্রেড লাইসেন্স এর ক্ষেত্রেও নাম এর ডুপ্লিকেসি ম্যাটার করে না। ট্রেডমার্ক এর সময় এইটা দেখা হয়, যদিও শতকরা ৫% বিজনেসও বাংলাদেশে ট্রেডমার্ক করতে হয় না (Ltd Company Holder এর ব্যাতিক্রম)। কিন্তু আমেরিকাতে এইটা আবার একদম শুরুতেই করে নিতে হয়। মানে, আপনার বিজনেস এর নাম হতে হবে ইউনিক এবং এইটা রিজার্ভ করে নিতে হয় একদম শুরু থেকেই। সুতরাং প্রথমেই আপনি যেই স্টেট এ বিজনেসটা তৈরি করবেন; সেই স্টেট এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এই নাম সার্চ করার অপশন পাবেন। যেমন ধরেন আপনি Kentucky স্টেট এ ব্যবসা এন্টিটি ফর্ম করবেন (আপনি কোন স্টেটে বিজনেসটা ফর্ম করবেন সেটিও রিসার্চ করে নিতে পারেন যেমন KY, WY, DE এসব)। এর জন্যে প্রথমেই sos. ky. gov (শুধু কেন্টাকির জন্যে) সাইটে গিয়ে আপনার এন্টিটি ফর্মেশন এর জন্যে লিঙ্ক পাবেন। আর সেখানে আপনার নাম দেওয়ার সাথে সাথেই ওরা দেখাবে যে এই ব্যবসায়িক নামটা এভেইলেবল আছে কি না। 

✅ স্টেপ ২ঃ যাদের নিজস্ব আন্তর্জাতিক মাস্টারকার্ড বা ভিসা কার্ড আছে, তারা এখন ওই Kentucky এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকেই Article of Organization, Company Stacks সহ সব তথ্য দিয়ে LLC তৈরি করার জন্যে সব প্রক্রিয়া নিজে নিজে করে এগিয়ে যেতে পারেন। 

তবে সমস্যা হচ্ছে - অধিকাংশ সমতেই ইউএস এর সরকারি সাইট গুলো বাংলাদেশি বিলিং এড্রেস এর ইন্টারন্যাশনাল কার্ড গুলোও সাপোর্ট করবে না। পাশাপাশি, একটা ব্যবসায় এন্টিটির (LLC টা) ভালো স্ট্যাটাস বজায় রাখার জন্যে নিয়মিত বিভিন্ন জিনিস যেমন BOI Report, Annual Report to State, S-Election Docuement, Yearly Tax Return সাবমিট করে নিতে হয়। সাথে সাথে অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের ফাইনান্সিয়াল কোম্পানি গুলোতে রেজিস্ট্রেশন এর সময় EIN সহ IRS পার্মিটেড বিভিন্ন তথ্য লাগে। 

কোন একটা কোম্পানির মাধ্যমে LLC করলে উপরেল্লিখিত সবকিছু তারা মেইন্টেইন করবে, আপনার হয়ে তারা পে করে দিবে, এমনকি যখনি কোন কিছু প্রদান করার কথা ওই স্টেট বা গভমেন্টকে; কোম্পানি আপনার হয়ে সব কিছু করে দিবে। আপনাকে তারাই জানাবে যখন যেটা লাগবে। নিজে নিজে করলে এই কাজ গুলোর জন্যে নিজেকেই খোঁজ খবর রাখতে হয়। এইখানে আপনার এক্সট্রা টাকা যাবে কিছু (কোম্পানির বিভিন্ন কাজের সার্ভিস চার্জ হিসেবে যা বাৎসরিক ১৫০ বা ২০০ ডলার এর বেশী না সর্বমোট); তবে অনেক ধরনের ঝক্কি ঝামেলা থেকে বাঁচতে পারবেন। আমার ব্যক্তিগত পরামর্শ হচ্ছে এই স্টেপে এসে আপনি IncAuthority, Bizee, LegalZoom, BusinessRocket বা এই কোম্পানি গুলোর থেকে আপনার LLC টা নিয়ে নেন। একদম ঝামেলামুক্ত ব্যবসা করতে পারবেন। 

✅ স্টেপ ৩ঃ  আপনার একটা ভার্চুয়াল ইউএস সংক্রান্ত মেইল এড্রেস খুলতে হবে এবং আমেরিকা বেইজড একটা ফোন নাম্বারও কালেক্ট করতে হবে, যেটা আপনার বিজনেস ডকুমেন্টস + এন্টিটি ফর্মেশন এর সময় প্রয়োজন হবে। আশার কথা হচ্ছে, ব্যাসিক মেইলিং সার্ভিস এর জন্যে প্রচুর ওয়েবসাইট আছে, যেগুলাতে রেজিস্ট্রেশন করলেই আপনি একটা USA Based মেইলিং এড্রেস পেয়ে যাবেন (অনেকে আবার ফ্রি সার্ভিসও দেয়)। যেমন MyUS, ReShip and Shipito - এর যে কোন একটাতে রেজিস্ট্রেশন করলেই হয়ে যাবে। 

তারপর আমেরিকা বেইজড ফোন নাম্বার আপনি কিনে নিতে পারবেন Google Voice, Line2, OpenPhone এমন যে কোন একটা প্লাটফর্ম থেকে। ফ্রি ফোন নাম্বারও পাওয়া যাবে যেমন TextFree, TextNow, CallHippo - এইগুলোও ট্রাই করে দেখতে পারেন। তবে আগেই সিওর হয়ে নিবেন সেই নাম্বার দিয়ে আপনি অন্তত Text Msg আদান প্রদান করতে পারেন কি না বা কেউ আপনাকে টেক্সট করলে সেটা আপনি দেখতে পাচ্ছেন কি না। 

✅ স্টেপ ৪ঃ  ধরে নিলাম আপনি IncAuthority  Bizee, LegalZoom, BusinessRocket বা এমন যে কোন একটা কোম্পানির শরণাপন্ন হয়েছেন। এখন আপনি IncAuthority বা এই ধরনের যেকোন ওয়েবসাইটে গেলেই Business Entity তৈরি করার Get Started অপশন পাবেন। এক্ষেত্রে অফিসিয়ালি ইউএস স্টেট ফাইলে আপনার ডিজায়ার্ড কোম্পানির নামও থাকবে আপনার কোম্পানির পাশাপাশি। 

শুধু ওনাদের দেয়া সব ফর্ম ফিল আপ করেন এবং যেসব ধরনের তথ্য চায় সব একটা একটা করে দিয়ে দিতে হবে। আপনি কি ধরনের বিজনেস করবেন, আপনার কোন শেয়ার হোল্ডার আছে কি না, আপনার কোম্পানিতে আর কারো কোন শেয়ার আছে কি না, বাংলাদেশে আপনার কাছে থাকা সরকারি সব তথ্য এক এক করে দিন। 

✅ স্টেপ ০৫ঃ উপরের ধাপ গুলো অনুযায়ী সব কিছু কমপ্লিট করার ৪৮ - ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই আপনার ইউএসএ বেইজড Limited Liability Company (LLC) টা গঠন হয়ে যাবার কথা। এখন আপনি আপনার এই নতুন এজেন্সির তথ্য অনুযায়ী আপনার এজেন্টদেরকে ওয়েবসাইট এর হেল্প নিয়েই ইউএসএর বিভিন্ন ব্যাংকে একাউন্ট খুলে নিতে পারবেন। পাশাপাশি Stripe (পেয়োনিয়ার বা ওয়াইজ এর ব্যাংক চালিয়ে দিতে পারবেন), Shopify Payments এবং PayPal সহ (লোকাল ইউএস ব্যাংক লাগে, যদিও একটা LLC থাকলে এইগুলো করা অনেক ইজি ইউএসএ তে) যত যায়গায় একাউন্ট দরকার, সব নিজের মতো করে সব করে নিতে পারবেন। 

এইখানে কিছু জিনিস বলে রাখা দরকার যে - এজেন্সিগুলো বাৎসরিক একটা সার্ভিস চার্জ কাটে এবং টুকটাক ফাইলিং এর সময়ও টাকা চার্জ করে। আবার ইউএস বিভিন্ন স্টেট অনুযায়ী ফাইলিং চার্জও ভিন্ন হয়। এজেন্সি গুলোকে সার্ভিস চার্জ দিতেই হবে, তবে টুকটাক অনেক সেবা আপনি বাইরে থেকে করিয়ে নিতে পারেন টাকা সেইভ করতে চাইলে। সেই টোটকা গুলো না হয় অন্য আরেকদিন শেয়ার করবো। 

✅ স্টেপ ০৬ঃ আপনাকে এর পর থেকে অবৈধ কোন জায়গায় একাউন্ট করতে হবে না। বা, একাউন্ট হারানোর কোন ভয় থাকবে না কোন প্লাটফর্ম থেকেই। আপনার ওয়েবসাইটে এখন আপনি আপনার বিজনেসকে USA অথবা Internationally Built ব্যবসা হিসেবে প্রমোট করতে পারবেন। আমেরিকানরা সাধারণত আমেরিকা বেইজড বিজনেসকে বেশী বিশ্বাস করে - সুতরাং টার্গেট মার্কেট নিয়েও আপনি একটা সুবিধাজনক জায়গায় থাকতে পারবেন। 

✅ স্টেপ ০৭ঃ এখন আপনার কাজ ব্যবসায় ফোকাস করা। ইন্টারন্যাশনাল মার্কেট টার্গেট করে প্রোডাক্ট তৈরি করা, সার্ভিস বিক্রি করা, নিজের অভিজ্ঞতা বিক্রি করা। আপনার মার্কেটটা এখন অনেক বড়, ইচ্ছে করলেই আপনি পৃথিবীর সব বড় বড় মিলিওনিয়ারদের টার্গেট করতে পারবেন। 

কারণ টাকা গ্রহণ করা, টাকা প্রদান করা কিংবা ইউএস বেইজড এড্রেস এবং ব্যবসায়ী এন্টিটি থাকার কারণে - আপনি এখন আপনার আশেপাশের হাজার বিজনেস এর চেয়ে বেশী পাওয়ারফুল। কোটি মানুষ এর চেয়েও আপনার ভিত্তি এখন বেশ শক্ত। আপনি নিজেকে এখন যতো বড় মনে করেন, যত বড় স্বপ্ন দেখেন; আপনি আসলেই তত বড়। জাস্ট এখন নিজেকে মেলে ধরার পালা, নিজে নতুন ভাবে গড়ে তোলার পালা। 

ওহ আরেকটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছি! 

এজেন্সি হায়ার না করতে চাইলে বা সব নিজে নিজে সব করতে না চাইলে অন্য আরেকটা একটা সিস্টেম আছে। আপওয়ার্ক থেকে ফ্রিল্যান্সার হায়ার করতে পারেন যারা USA এর যে কোন একটা স্টেট এ আপনার পছন্দমত নামে বিজনেস সেটআপ করে দিতে পারবে এবং আমেরিকান সরকারের যতো ধরনের লিগাল ডকুমেন্টস লাগে, সেসব গুলো সে আপনার নাম দিয়ে বানিয়ে সাবমিট করে নিতে পারবে। 

এক্ষেত্রে ঝামেলা যেটা হয়, বছর বছর ট্যাক্স সাবমিট করা, BOI রিপোর্ট সাবমিট করা ইত্যাদি আপনাকেই নিজেকেই খোঁজখবর নিয়ে আপডেটেড থাকতে হবে যে কখন কোনটার সময় হয়েছে এবং কখন কি কি করতে হবে এইসব। ট্যাক্স এবং স্টেট ফাইলিং নিয়ে এক্সপ্রিয়েন্স না থাকলে এইসব কাজ বেশ কঠিনই মনে হবে আপনার কাছে।

সুতরাং - আমার উপরের স্টেপসগুলো যদি কঠিন মনে হয়, তাহলে এইটা নিয়ে মাথা ঠাণ্ডা করে একদিন বসেন। প্রত্যেকটা স্টেপ ভালোভাবে বুঝার চেষ্টা করেন। গুগল করে করে উপড়ে উল্লেখিত সব সাইটগুলো নিয়ে ঘাটাঘাটি করেন। আশা করি অনেক সহজ লাগবে একটা সময়। 

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow