অনম বিশ্বাসের 'দুই দিনের দুনিয়া' রিভিউ
একটা বাজে কাজ দেখা যেমন বিরক্তির, সময় নষ্টের তেমনি একটা ভাল নির্মাণ সময়টাকে করে আনন্দের। অনেকেই বলেন, এই ফজলুর রহমান বাবু বা এই চঞ্চলকে দিয়ে আমরা আর কী করবো! লেবু বেশি চিপে তিতা হয়ে যাচ্ছে কী না! 'দুই দিনের দুনিয়া'র মত কাজ আমাদের আবার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখায়, ভাল শিল্পীদের কাছ থেকে আরো অনেক রকমের চরিত্র আর অভিনয় পাওয়ার আছে। প্রায় দেড় ঘণ্টার এই কাজটা আমার মনে থাকবে অনেকদিন, অনেকগুলো কারনে।
গল্পের দুটো লেয়ার আছে - একটা জাগতিক আর অন্যটি যৌক্তিক। আমি শুধু জাগতিকটা যদি বলি, এখানে সামাদ নামে একজন ট্রাক ড্রাইভারকে দেখা যায় যে তার হেল্পারকে দিয়ে অনেকগুলো টাকা পাঠাচ্ছে কোথাও। তার পরিবারে স্ত্রী আর সাত বছরের মেয়ে মিলি আছে। এবার গল্পে আগমন ঘটে এক 'মিস্ট্রিম্যান' এর যে সামাদ ড্রাইভারকে ফলো করছে। সামাদ তার মুখোমুখি হলে সে জানায়, সে ভবিষ্যৎ থেকে এসেছে এবং সামাদকে সমূহ বিপদ থেকে বাঁচার পথ বাতলে দিতে পারে। এই লোকটা বাটপার না সৎ সেটাই সামাদ খুঁজেছে পুরোটা সময়।
আমার ব্যক্তিগতভাবে যৌক্তিক অংশটা ভাল লাগে নি, যেটা আপনার মনে বারবার প্রশ্নের মত আসবে। ভাল লাগে নি ক্লাইম্যাক্সে অনুমেয় সমাপ্তিও। তবে গল্পের সাসপেন্স আর জাগতিক অংশের যে প্রেজেন্টেশন তা অতুলনীয়, প্রশংসনীয় এবং বর্তমানের অনেক 'হাইপ' তোলা নির্মাতাদের জন্য শিক্ষণীয়। অনম বিশ্বাস 'দেবী'র মত নিজের কিছু স্টাইল অফ মেকিং এখানেও ধরে রেখেছেন, আশরাফুল আলমের সাথে স্ক্রিপ্টে তার হাত লাগানোটা খুবই ভাল লেগেছে। রাজিবুল ইসলামের ক্যামেরার কাজ বারবার তাকে আলাদা করে দেয়। ভাল ছিল ইমন চৌধুরীর মিউজিক।
চঞ্চল আর বাবুর ফেসঅফ ওয়েব কনটেন্টে এর আগে হয়েছে কী না জানি না। কেউ কাউকে ওভারশেড করে নি, কেউ কাউকে স্পেসের ব্যাপারে ছাড় দেয় নি আবার গল্পে রোল অনুসারে দুজনেই ভিন্ন দুই সময়ে দাপট দেখিয়েছে। চঞ্চল চৌধুরী এই কাজের জন্য খুব বেশি সময় দিয়েছেন বলে মনে হয় নি তবে উতড়ে গেছেন, ভাল লেগেছে ফজলুর রহমান বাবুর অসাধারণ নিরবতা। তানভীন সুইটি কেন নিয়মিত অভিনয় করেন না, সেটা আফসোস! তানিয়া বৃষ্টিও ঠিকঠাক। রাত দিনের কালারাইজেশন ভাল হয় নি, রিপিটেড শট ছিল অনেক। তবে মজার জায়গা ছিল ডায়লগ। টাউটের প্রকারভেদ নিয়ে ডায়লগটা খুব ভাল। চঞ্চলকে এত রাফ টোনে গত কয়েক বছরে দেখি নি।
সবমিলে দারুণ একটি উপভোগ্য কাজ অনম বিশ্বাসের 'দুই দিনের দুনিয়া'
What's Your Reaction?