রকিবুল হাসানের প্রচন্ড ঘুষি খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো কামরান রশীদ

আইয়ুব খান মেড আ মিসটেক, হি শুড কিলড দ্য ----- মুজিব।" কথাটা বলার পর এক সেকেন্ড দেরি হলো না। রকিবুল হাসানের প্রচন্ড ঘুষি খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো কামরান রশীদ ।

রকিবুল হাসানের প্রচন্ড ঘুষি খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো কামরান রশীদ
"আইয়ুব খান মেড আ মিসটেক,
হি শুড কিলড দ্য ----- মুজিব।"
কথাটা বলার পর এক সেকেন্ড দেরি হলো না।
রকিবুল হাসানের প্রচন্ড ঘুষি খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো কামরান রশীদ ।
তারপর ভয়ংকর পিটুনি। পেটাতে পেটাতে কামরান কে টিলার নিচে নিয়ে এলেন রকিবুল হাসান, হাতের কাছে যা পেলেন, তাই দিয়ে চললো আঘাতের পর আঘাত। অবশেষে, রক্তাত্ত কামরান জীবন ভিক্ষা চেয়ে রকিবুলের হাত থেকে বেঁচে যান।
সময়টা ১৯৭০।
এই বাংলার সন্তান, বাঙালীর সন্তান, ১৮ বছরের টগবগে যুবক, ক্রিকেটার রকিবুল হাসান।
করাচীতে পাকিস্তান অনুর্ধ - ২৫ দলের ক্যাম্পে তখন। ক্যাম্পের সেই সন্ধ্যায় আড্ডা চলছিল। পাকিস্তানের রাজনীতি তখন উত্তাল। ক্রিকেটারদের সেই আড্ডায় চলে আসে রাজনীতিও।
বাঁহাতি স্পিনার পেশোয়ারের কামরান রশীদ যখন বলে উঠে - "আইয়ুব খান মেড আ মিসটেক, হি শুড কিলড দ্য মুজিব।"
তখন খোদ পশ্চিম পাকিস্তানের করাচিতে এই দুঃসাহসী প্রতিবাদের ঘটনা ঘটিয়ে দেন বাঙালী যুবক রকিবুল হাসান।
করাচিতে বসে একজন বাঙালির এই রুদ্রমূর্তি দেখে যেন বিস্ময়ে, আতংকে পাথর হয়ে রইলো পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা । পরদিন কোর্ট মার্শালে ডাক পড়ল রকিবুল হাসানের।
মেজর সুজা জিঞ্জাসা করলেন, "তুমি কেন এমন করেছ?"
রকিবুল মেজরের চোখে চোখ রেখে উত্তর দিল, "ও আমার নেতাকে নিয়ে বাজে কথা বলেছে। বাঙালির নেতাকে গালি দিয়েছে। যতবার গালি দিবে ততবার আমি এমন করবো।"
২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১। আন্তর্জাতিক একাদশের বিপক্ষে পাকিস্তানের টেস্ট ম্যাচ, ঢাকা স্টেডিয়ামে। বাঙালি হওয়ার অপরাধে বার বার বঞ্চিত হয়ে সেই টেস্ট খেলায়, পাকিস্তান টিমে প্রথম একাদশে প্রথম ডাক পান রকিবুল হাসান।
আনন্দে রাতে ঘুম হয় না রকিবুলের। কিন্তু সব স্বপ্ন মাটি হয়ে গেলো ম্যাচের আগের দিন। পাকিস্তান দলের সব খোলোয়ারকে দেওয়া হয়েছে গ্রে নিকোলস ব্রান্ডের ব্যাট। আর সেই ব্যাটের উপরে লাগানো আছে জুলফিকার আলী ভুট্টোর নির্বাচনী প্রতীক তলোয়ার।
রকিবুলের মাথায় রক্ত উঠে গেলো।
এইতো সেদিন নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পুরো পাকিস্তানে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে।
বাঙালির সরকার গঠনের অপেক্ষা।
না না না। ব্যাটে আইয়ুব খানের নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে মাঠে নামা যাবে না।
রাতেই পূর্বাণী হোটেল থেকে বের হয়ে বন্ধু শেখ কামালের সাথে পরামর্শে বসলো রকিবুল।
- কী করা যায় !!
-২৬ ফেব্রুয়ারি সকাল, ঢাকা স্টেডিয়াম। হাজার হাজার বাঙালি দর্শক গ্যালারীতে। পশ্চিম পাকিস্তানি আজমত রানাকে নিয়ে, ব্যাটিং শুরু করতে নামলো রকিবুল।
একজন ফটোগ্রাফার প্রথম খেয়াল করলো ব্যাপারটা।ছুটে এলেন ছবি তুলতে। মুহূর্তে স্টেডিয়াম জুড়ে খবর ছড়িয়ে পড়ল - রকিবুল তার ব্যাটে তলোয়ারের বদলে
" জয় বাংলা " স্টিকার লাগিয়ে খেলছে।
স্টেডিয়াম জুড়ে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে
শ্লোগন উঠলো, জয় বাংলা , জয় বাংলা।
জ্বলে উঠলো দেশি- বিদেশি সব ক্যামেরার ফ্লাশ ।
পরদিন বিশ্ব জুড়ে বড় বড় করে পত্রিকার হেডিং
"পাকিস্তানের হয়ে জয়বাংলা স্টিকার নিয়ে মাঠে নেমে দুনিয়া চমকে দিলেন রকিবুল হাসান।"
মার্চ এলেই লাল-সবুজের পতাকার দিকে চোখ পড়তেই , স্মৃতি রকিবুল হাসান কে নিয়ে যায় সেই ১৯৭১ সালে। সেই ম্যাচ পন্ড হয়ে যাওয়ার পর পশ্চিম পাকিস্তানি খেলোয়ার জহির আব্বাস ফিরে যাচ্ছে পশ্চিম পাকিস্তানে। যাওয়ার সময় জহির হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, "রকিবুল , করাচিতে দেখা হবে আবার।"
রকিবুল হাসান দৃঢ়কন্ঠে বলেছিলেন, "অবশ্যই দেখা হবে। তবে আমার সঙ্গে তখন থাকবে নতুন
পাসপোর্ট।"
কথা রেখেছিলেন আমাদের রকিবুল হাসানেরা।
নয় মাস যুদ্ধ করে, নতুন পাসপোর্টের মালিক হয়ে
তবেই ঘরে ফিরেছিলেন ।
এইসব বীরত্ব গাঁথায় গর্বিত হই।
নতুন প্রজন্মকে জানিয়ে যেতে চাই - "প্রতি বছর ২৬ মার্চের সকালে পতপত করে উড়তে থাকা লাল-সবুজের পতাকার দিয়ে তাকিয়ে চোখের কোণায় চিক চিক পানি জমে।"
নভেম্বর ২০২১!!!
অথচ আমরা আজ কি দেখতে পাই?
বাংলাদেশের দর্শকরা পাকিস্তানের পতাকা, জার্সি নিয়ে বাংলাদেশ ভার্সেস পাকিস্তান খেলায় বাংলাদেশের মাটিতে, নিজের দেশকে সমর্থন না করে পাকিস্তানকে সমর্থন করছে।
(সংগৃহীত)

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow